জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ - জলাতঙ্ক রোগের প্রতিরোধ

জলাতঙ্ক যার বৈজ্ঞানিক নাম হাইড্রোফোবিয়া। জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ দেখা দেওয়ার পরে সংক্রমিত ব্যক্তিকে আর বাঁচানো যায় না। জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ দেখা দেওয়ার পূর্বে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হয়। কারণ এই জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার পরে রোগীর জন্য আর কিছু করার থাকে না। আজকের এই পোস্টে আমরা এই জীবন নাশক জলাতঙ্ক রোগের ব্যাপারে ও জলাতঙ্ক রোগের প্রতিরোধ এর ব্যাপারে  বিস্তারিত আলোচনা করব।

জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ - জলাতঙ্ক রোগের প্রতিকার
জলাতঙ্ক একটি গুরুতর ও মারাত্মক ভাইরাস আক্রমণ। বিভিন্ন প্রাণীর কামড় বা আঁচড় থেকে এই সংক্রমণ রোগটি হয়ে থাকে। ভয়ংকর এই রোগ থেকে কিভাবে মুক্তি পাবেন এবং কিভাবে এর প্রতিরোধ করবেন এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পুরো পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

সূচিপত্রঃ-জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ - জলাতঙ্ক রোগের প্রতিরোধ

জলাতঙ্ক রোগ কি

জলাতঙ্ক যার ইংরেজি অর্থ হচ্ছে (Rabies) রেবিস। একটি একটি ভাইরাস জনিত জুনেটিক রোগ যার অর্থ হচ্ছে যে রক্তে প্রাণীর মাধ্যমে মানুষের শরীরে ছড়ায়। এক ধরনের নিউরো ট্রপিক ভাইরাস দ্বারা এই রোগটি হয়ে থাকে যার নাম হচ্ছে রেবিস ভাইরাস 

জল আতঙ্ক এমন একটি রোগ যে রোগ হলে রোগী পানি দেখে ভয় পায় এবং তার পানি পিপাসা লাগলেও রোগী পানি পান করতে পারেনা। যেহেতু এই রোগে রোগী পানি দেখলে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে এজন্য এর নাম রাখা হয়েছে জলাতঙ্ক । জলাতঙ্ক এমন একটি রোগ জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ গুলো দেখা দেওয়ার পরে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয় না। এটি একটি মরণব্যাধি রোগ। মেডিকেল বা বৈজ্ঞানিক ভাষায় একে হাইড্রোফবিয়া বলা হয়। এটি এমন একটি রোগ যা কোন প্রাণীর শরীর থেকে মানব দেহে প্রবেশ করে থাকে। 

কোন জলাতঙ্ক রোগ বাহি প্রাণী যদি কোন মানুষকে কামড় দেয় বা আঁচড় দেয় তাহলে সেই মানুষটি জলাতঙ্ক রোগের শিকার হয়। যেহেতু এটি একটি ছোঁয়াচে রোগ সেহেতু জলাতঙ্ক রোগ বাহি প্রাণীর লালা অথবা সেই প্রাণীর বিভিন্ন উচ্ছিষ্টের সংস্পর্শে কোন মানুষ আসে তাহলে সেই মানুষটির জলাতঙ্ক রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আবার জলাতঙ্ক রোগ আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির সংস্পর্শে যদি আরেকটি ব্যক্তি আসে অথবা ওই ব্যক্তির যেকোন প্রকার উচ্ছিষ্ট হাঁচি কাশি ইত্যাদি সংস্পর্শে আসে তাহলে সেই ব্যক্তিরও জলাতঙ্ক রোগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

জলাতঙ্ক রোগের কারণ

জলাতঙ্ক রোগ সাধারণত গৃহপালিত বিভিন্ন প্রাণী অথবা বিভিন্ন বন্য প্রাণীদেরকে সংক্রমিত করে। এবং পরে কোন মানুষ এই ধরনের প্রাণীর সংস্পর্শে আসলে এবং কোনভাবে এদের লালা মানবদেহে প্রবেশ করলে অথবা এই ধরনের প্রাণীর কামোর বা আঁচড় লাগলে সেই ব্যক্তির শরীরে রেবিস বা জলাতঙ্ক রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বিশ্বের প্রায় প্রতিটা দেশেই এই জলাতঙ্ক রোগের উপদ্রব রয়েছে। বিশেষ করে এশিয়া মহাদেশের দেশগুলোতে এই রোগটি ব্যাপক আকারে বিস্তার লাভ করে থাকে। মরণব্যাধি এই জলাতঙ্ক রোগের কারণে সারা বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় চব্বিশ থেকে ষাট হাজার মানুষের মৃত্যু হয়ে থাকে।

জলাতঙ্ক রোগের কারণ হচ্ছে এক ধরনের রেবিস নামক ভাইরাস। এই ভাইরাসটি যখন কোন প্রাণীর মাধ্যমে মানব শরীরের প্রবেশ করে থাকে তখন সেই ব্যক্তির জল আতঙ্ক রোগ হয়ে থাকে। বিভিন্ন জীবজন্তুর মাধ্যমে এই রোগ ছড়াতে পারে যেমন এদের মধ্যে রয়েছে বাদুর, কুকুর, শেয়াল ইত্যাদি এবং আরো বন্যপ্রাণী। যেহেতু আমরা আগেই জেনেছি জলাতঙ্ক রোগ হয় রেবিস ভাইরাসের কারণে। এইজন্য যখন কোন রেবিস ভাইরাস আক্রান্ত প্রাণী যখন কোন মানুষকে কামড়ায় অথবা তার মুখের লালা যদি কোন ভাবে কোন ক্ষতস্থানের সংস্পর্শে আসে তাহলে সেই ভাইরাস পড়লে প্রবেশ করে এবং ছড়িয়ে পড়ে।

এই ভাইরাসটি কোন সুস্থ মানুষ শরীরে প্রবেশ করলে স্নায়ুতন্ত্র কে আক্রমণ করে। যার ফলে ব্যক্তির বিভিন্ন ধরনের অমানবিক আচরণ দেখা যায় এবং আক্রান্ত ব্যক্তি পানি দেখে ভীষণ ভয় পায় এবং কমায় চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই রেবিস ভাইরাসটি দু ধরনের হয়ে থাকে একটি হল ফিউরিয়াস অন্যটি হলো প্যারালিটিক।

জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ

জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ গুলো হচ্ছে আক্রান্ত ব্যক্তি আলো সহ্য করতে পারে না। পেশীতে মোচর অনুভব করে এবং তীব্র যন্ত্রণা অনুভব করে। মুখ থেকে লালা ঝরতে থাকে এবং পানি দেখে অত্যন্ত ভয়  পায় । আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় এবং মস্তিষ্ক ফুলে যায় । ভাইরাস শরীরে যত বাড়তে থাকে এর লক্ষণ গুলো তত তীব্রভাবে প্রকাশ পেতে থাকে। সাধারণত রিপিজ ভাইরাসের লক্ষণ দেখা দিতে ৩০ থেকে ৬০ দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। আমরা এই ভাইরাসের লক্ষণগুলোকে কিছু ধাপে বিভক্ত করেছি যেমনঃ-

প্রথম ধাপ যদি কোন রেবিস ভাইরাস বাহি প্রানি কামড় দেয় বা আঁচড় দেয় তাহলে ক্ষতস্থানের চারপাশে জালা অথবা শিরশিরানির অনুভূতি হতে থাকে। কিছু ক্ষেত্রে হালকা চুলকানি হতে পারে ও ব্যাথা অনুভব হতে পারে।

দ্বিতীয় ধাপ রেডিস ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর গায়ে জ্বর জ্বর ভাব দেখা দিতে পারে। শীত লাগতে পারে এবং বমি বমি ভাব দেখা দিতে পারে। এরকম সময় পেশীতে তীব্র ব্যথা অনুভব হয় এবং অসহিষ্ণুতা দেখা দেয়। আক্রান্ত ব্যাক্তির খিদে না পাওয়া, বিভ্রান্তির শিকার হওয়া, তীব্র আলো থেকে দূরে পালানোর ইচ্ছা হওয়া ,কোলাহলপূর্ণ স্থান পছন্দ না হওয়া , ঢক গেলার সময় গলায় স্বাসনালিতে ব্যাথা অনুভব করা,পানি পান করার সময় কন্ঠনালিতে গলার প্রোয়োজনীয় বিভিন্য মাসলে সংকচন হয়।

তৃতীয় ধাপ রেবিস ভাইরাস শরীরে বাসা বাঁধার পর যত দিন যায় ধীরে ধীরে তীব্র আকার ধারণ করে এবং রোগীর শারীরিক এবং মানসিক বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে। এ সময় তীব্র জ্বর আসে অসংলগ্নতা এবং রোগী আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। রোগী তার মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে।এই সময় রোগীর খিচুনি দেখা দেয় । রোগী আলো দেখে ভয় পায়। ঘন ঘন এবং ছোট ছোট শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করে মুখ থেকে লালা ঝরতে থাকে । রোগী হ্যালোশিনেশনের শিকার হয়। রোগী চেতনা শূন্য হয়ে পড়ে। বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ নাড়ানোর ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।

শেষ ধাপ রেবিস আক্রান্ত ব্যক্তির উপরের সব লক্ষণ গুলো যখন দেখা দেয় তখন আমরা এটাকে জলাতঙ্ক রোগ বলে থাকি। আর উপরের সব লক্ষণ গুলি প্রকাশ পেলে রোগীকে আর বাঁচানো সম্ভব হয় না । এ পর্যায়ে রোগী জলের সংস্পর্শে আসলে রোগীর প্যানিক অ্যাটাক হতে পারে। রোগী বিভিন্ন ধরনের অস্বাভাবিক আচরণ করে।

 শরীরের সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে । রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা দেখা যায় । শ্বাসকষ্টের কারণে রোগীর পেশি পর্যন্ত নাড়ানোর শক্তি থাকে না। রোগী কমায় চলে যেতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তি পাগলের মতো আচরণ করে বদ্ধ উন্মাদ হয়ে পড়ে। কথাবার্তা ও ভাবভঙ্গির মধ্যে অস্বাভাবিকতা প্রকাশ পায়। বিভিন্ন ধরনের বিকৃত আওয়াজ করতে থাকে । 

আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে এবং অন্যকে আঁচড় বা কামড় দিতে চেষ্টা করে । তীব্র পানি পিপাসা পেলেও পানি পান করতে পারেনা । পানির সংস্পর্শে আসলে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন ধরনের অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে । কথা কম বলবে এবং কণ্ঠস্বর কর্কশ হয়ে উঠবে এবং আক্রান্ত ব্যক্তির মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাবে ও মুখ থেকে অনবরত লালা ঝরতে থাকবে । রোগী চেতনা শূন্য হয়ে পড়ে। রোগী কোমায় চলে যেতে পারে এবং শেষ পর্যন্ত রোগীর মৃত্যুবরণ ঘটতে পারে।

জলাতঙ্ক রোগের বিস্তার

জলাতঙ্ক রোগ হচ্ছে রেবিস ভাইরাস ঘটিত একটি মারাত্মক রোগের আক্রমণ। প্রতি বছর আমাদের দেশে গড়ে প্রায় ২০ হাজার মানুষ মারা যায় এই জলাতঙ্ক রোগ এর শিকার হয়ে। সাধারণত জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ গুলো .৯ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে দেখা দিতে শুরু করে। জলাতঙ্ক রোগ সাধারণত আমাদের দেশে কুকুরের কামড়ে বেশি হয়ে  থাকে । এই ভাইরাসটি সকল স্তন্যপায়ী প্রাণীদের কে আক্রান্ত করতে পারে। যদি কোন প্রাণীর মধ্যে রেবিস আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পায় তাহলে সেই প্রাণীটিকে মেরে ফেলা উত্তম। এভাবেই এই রোগের বিস্তার লাভ করা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

 জলাতঙ্ক এই রোগটি সারাবিশ্বে প্রায় ১৫০ টিরও বেশি দেশে হয়ে থাকে । এই রোগটি প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ৫ থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুদেরকে এ রোগের বেশি শিকার হতে দেখা যায়। এন্টার্টিকা মহাদেশ ব্যতীত বাকি সব মহাদেশ গুলোতে জলাতঙ্ক রোগের উপস্থিতি খুঁজে পাওয়া গেছে। এশিয়া মহাদেশ এবং আফ্রিকা মহাদেশের প্রায় 95% মানুষের মৃত্যু ঘটে থাকে জল আতঙ্ক রোগের কারণে।

যেসব প্রাণী কামড়ালে জলাতঙ্ক রোগ হয়

যদিও বা জলাতঙ্ক রোগটি মূলত হয়ে থাকে রেবিস ভাইরাস আক্রান্ত কোনো প্রাণীর কামর বা আঁচড় বা এর লালার সংস্পর্শে আসলে। কিন্তু বাংলাদেশে প্রায় ৯৫% জলাতঙ্ক রোগ হয়ে থাকে কুকুরের কামড় বা আঁচড় থেকে। এছাড়াও জলাতঙ্ক রোগ হওয়ার পেছনে যেসব প্রাণীগুলোকে দায়ী করা হয় তাদের মধ্যে রয়েছে  কুকুর , বিড়াল , বানর শিয়াল , বিজি, বাদুর ইত্যাদি। এই ধরনের প্রাণী গুলো মানব শরীরে কামড় অথবা আঁচড় দেয় অথবা অনেক সময় এই ধরনের প্রাণীর লালা মানব শরীরের ক্ষতস্থানের সংস্পর্শে আসলে এই ভাইরাসটি রক্তের মধ্যে ঢুকে পড়ে এবং শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। পরে ধীরে ধীরে তা জলাতঙ্ক রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। রেবিস আক্রান্ত যে কোন প্রাণীকে রেবিড প্রাণী বলা হয়। এই ধরনের প্রানির মধ্যে জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ গুলো দেখা যায়। রেবিস ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত  যেকোনো প্রাণীর ভাইরাল এনসোফালাইটিস হয়। যার কারণে এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত প্রাণীটি আক্রম হয়ে ওঠে এবং সামনে কাউকে পেলে কামড় দেয় বা আঁচড় দেয় বা বিভিন্নভাবে হামলা করে থাকে।

জলাতঙ্ক রোগ হলে করণীয়

একবার জলাতঙ্ক জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ দেখা দিলে অথবা হয়ে গেলে আক্রান্ত রোগীকে আর বাঁচানো সম্ভব হয় না। যেহেতু জলাতঙ্কর কোন চিকিৎসা নেই। কোন এন্টিভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে না। যেহেতু একবার জলাতঙ্ক রোগ হয়ে গেলে আর করার কিছু থাকে না সেহেতু কোন রেবিস ভাইরাস বহি প্রাণী কামর বা আঁচড় লাগলে অথবা লালার সংস্পর্শে আসলে এবং জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ গুলো প্রকাশ পাওয়ার আগে যদি এই রোগের  চিকিৎসা নেওয়া যায় তাহলে সুস্থ হয়ে ওঠা সম্ভব। আমাদের দেশে এই রোগের জন্য টিকা দেওয়া হয়। কোন রেবিস বাহি প্রাণীর আক্রমণের শিকার হলে সঙ্গে সঙ্গে টিকা গ্রহণ করলে এই মরণব্যাধির রোগের হাত থেকে বাঁচা সম্ভব।

যেহেতু জলাতঙ্ক রোগের জন্য শুধু প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা গ্রহণ করে থাকলে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। । এটি একটি জুনেটিক রোগ। এই রোগের ভাইরাল এ্যন্টিডোজ এখনও তৈরি হয়নি। তবে এই রোগের টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে। জলাতঙ্ক রোগের হাত থেকে বাঁচতে হলে জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ গুলো প্রকাশ পাওয়ার আগেই পর্যাপ্ত সময়ে টিকা গ্রহণ করা ছাড়া দ্বিতীয় কোন উপায় নেয়।

জলাতঙ্ক একটি ছোঁয়াচে রোগ

হ্যাঁ জলাতঙ্ক একটি ছোঁয়াচে রোগ । কারণ জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসলে দ্বিতীয় ব্যক্তির এই রোগের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এক্ষেত্রে জলাতঙ্ক রোগীর উচ্ছিষ্ট বা একে গ্লাসে পানি পান করা বা একই থালায় খাবার খাওয়া ইত্যাদি থেকে বিরত থাকতে হবে । জলাতঙ্ক রোগীর হাঁচি কাশি থেকে অপর ব্যক্তির শরীরের ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে । জলাতঙ্ক রোগীর কামড় বা আঁচড় থেকে এই রোগ ছড়াতে পারে । এজন্য জলাতঙ্ক রোগীকে আলাদা করে রাখতে হয়। রেবিস ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির অঙ্গ ডোনেশন এর মাধ্যমে এ রোগ ছড়াতে পারে। পুরুষদের ক্ষেত্রে বীর্যের মাধ্যমে ছড়াতে পারে এবং স্ত্রীদের ক্ষেত্রে যোনি তরলের মাধ্যমে এ রোগ ছড়াতে পারে। অর্থাৎ রিলিজ ভাইরাস আক্রান্ত কারো সাথে যৌন মিলনের মাধ্যমে রোগ ছড়াতে পারে।

জলাতঙ্ক রোগের চিকিৎসা

যেকোনো প্রাণের কামড় বা আঁচড় লাগলে অবস্থানটি কমপক্ষে ১০ থেকে ২০ মিনিট সাবান পানি অথবা ভিন্ন ক্ষার জাতীয় জিনিস দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। হাতের কাছে যদি ক্লরহেক্সিডিন বা পভিডন থাকে অথবা পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট থাকলে এগুলো দিয়ে ক্ষতস্থান ভালোভাবে পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। 

প্রাথমিক পর্যায়ে এই পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করলে .৭০ থেকে ৮০ শতাংশ জীবাণু ধ্বংস হয়ে যায়। চিকিৎসকের পরামর্শ অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে। প্রাণী সংক্রান্ত বিভিন্ন টিকা অথবা ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে হবে। যদিও বা এ রোগের কোন অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ এখনো তৈরি হয়নি। তবে এই রোগের টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে। রেবিস আক্রান্ত কোনো প্রাণী কামড় বা আচর দিলে সাথে সাথে টিকা গ্রহণ করলে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

জলাতঙ্ক রোগের চিকিৎসার জন্য হিউম্যান ডিপ্লয়েড সেল ভ্যাকসিন  মোট পাঁচটি ডজে  প্রয়োগ করা হয়। এক্ষেত্রে প্রথম দিনে একটি , তৃতীয় দিনে একটি , সপ্তম দিনে একটি , ১৪ তম দিনে একটি এবং ২৮ তম দিনে একটি ।

জলাতঙ্ক রোগের প্রতিরোধ

জলাতঙ্ক রোগ প্রতিরোধ করার একমাত্র উপায় হল জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ গুলো প্রকাশ পাওয়ার আগেই সময়ের সাথে সাথে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া। যেমন সন্দেহ জনক কোন প্রাণীর কামর বা আঁচড় লাগলে দ্রুত ভ্যাকসিন বা টিকা গ্রহণ করা।এই ভাইরাসের জন্য বেশ কয়েক ধরনের টিকা আবিষ্কার করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নিরাপদ টিকা হচ্ছে হিউম্যান ডিপ্লয়েড সেল ভ্যাকসিন, নার্ভ টিস্যু ভ্যাকসিন , ডাক ইম্ব্রিউ ভ্যাকসিন ইত্যাদি। কুকুর হচ্ছে জলাতঙ্ক রোগ ছড়ানোর মূল উৎস । কারণ আমাদের দেশে ৯৫ ভাগ জলাতঙ্ক রোগ হওয়ার ক্ষেত্রে কুকুরের অবদান থাকে। এক্ষেত্রে প্রতিবছর সরকারিভাবে কুকুরকে বিভিন্ন রকম ভ্যাকসিন দেওয়া হয় এই ভ্যাকসিন এর মাধ্যমে জলাতঙ্ক রোগ প্রতিরোধ করা যায়।

যেহেতু জলাতঙ্ক রোগ প্রতিরোধ করার একমাত্র উপায় হচ্ছে পর্যাপ্ত সময়ে টিকা গ্রহণ করা । এই রোগের জন্য এখন পর্যন্ত অনেক ধরনের টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে এদের মধ্যে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ও অথরিটি পূর্ণ টি কার নাম হচ্ছে হিউম্যান ডিপ্লয়েড সেল ভ্যাকসিন

জলাতঙ্ক রোগ প্রতিরোধ করার জন্য সাধারণত দুই ভাবে টিকা প্রদান করা হয় একটি হচ্ছে প্রি এক্সপোজার টিকা আর একটি হচ্ছে পোস্ট এক্সপোজার টিকা। রেবিস ভাইরাস বহনকারী যে কোন প্রাণীর আক্রমণের পূর্বে যে টিকাটি গ্রহণ করা হয় সেটাকে বলা হয় প্রি এক্সপোজার টিকা। এই টিকাটি তিনটি ডোজে সম্পন্ন করা হয় । পর্যায়ক্রমে প্রথম দিনে একটি সপ্তম দিনে একটি এবং একুশ তম দিনে একটি । এবং প্রতিবছরের এটি কার বুস্টারডোজ প্রদান করা হয় ।

আর পোস্ট এক্সপোজার টিকার ক্ষেত্রে  কোন রেবিস বহনকারী প্রাণীর আক্রমণের পর এই টিকাটি গ্রহণ করা হয়ে থাকে। এই টিকাট এর ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্ব দিয়ে নিয়মিত রুটিন অনুযায়ী এটি টিকাটির ডোজ সম্পন্ন করতে হয়। পর্যায়ক্রমে এই টিকাটি মোট ছয়টি ও যে সম্পন্ন করা হয় । পাঁচটি নরমাল ডোজ এবং একটি থাকে বুস্টার ডোজ । প্রথম দিনে একটি তৃতীয় দিনে একটি সপ্তম দিনে একটি ১৪ তম দিনে একটি এবং ২৮ তম দিনে একটি মোট পাঁচটি নরমাল ডোজ দেওয়া হয় এবং ৯০ তম দিনে একটি বুস্টার ডোজ প্রদান করা হয়। এই টিকাটি নাভির চারপাশে দেওয়া হয়।

জলাতঙ্ক রোগ প্রতিরোধ করার জন্য আক্রান্ত ব্যক্তিকে অবশ্যই পোস্ট এক্সপোজার টিকা গ্রহণ করতে হবে। এই রোগ প্রতিরোধের জন্য বিভিন্ন জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। এই রোগ বহনকারী কোন সন্দেহজনক প্রাণীকে মেরে ফেলতে হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url