কফির সাথে ঘি মিশিয়ে খেলে কি হয় জেনে নিন

সন্মানিত পাঠকগণ সকালের ধোঁয়া ওঠা এক কাপ কফি ছাড়া আমাদের দিনটাই যেন শুরু হতে চায় না। কিন্তু কখনো ভেবেছেন, আপনার এই প্রিয় পানীয়টিতে সামান্য এক চামচ খাঁটি ঘি যোগ করলে ঠিক কী ম্যাজিক হতে পারে? 
কফির সাথে ঘি মিশিয়ে খেলে কি হয় জেনে নিন


কফি আমাদের অনেকেরই দিনের শুরুতেই অপরিহার্য পানীয়। তবে শুধু কফি নয়, সম্প্রতি স্বাস্থ্য সচেতনদের মধ্যে এক নতুন ট্রেন্ড চলে এসেছে—কফির সাথে ঘি মিশিয়ে খাওয়া। 
পেজ সূচিপত্রঃ কফির সাথে ঘি মিশিয়ে খেলে কি হয় জেনে নিন
  • ঘি-কফি—সোশ্যাল মিডিয়ার নতুন স্বাস্থ্য বোমা!
  • কেন মানুষ ঘি কফির দিকে দৌড়াচ্ছে?
  •  ঘি কফি কি সত্যিই ফ্যাট বার্ন করে?
  • সকালে খালি পেটে ঘি কফি খাওয়া যাবে কি না জানুন
  • ঘি কফির ১০টি বৈজ্ঞানিক ভিত্তিক উপকারিতা
  • যারা ওজন কমাতে চান তাদের জন্য বিশেষ নোট
  • ভুলভাবে খেলেই সর্বনাশ! কোন ৫টি ভুল এড়িয়ে চলবেন
  • ঘি কফির সেরা রেসিপি
  • আপনার জন্য ঘি কফি উপযুক্ত কি না?

ঘি-কফি—সোশ্যাল মিডিয়ার নতুন স্বাস্থ্য বোমা!

শুনতে হয়তো প্রথমে একটু নাক সিটকাতে পারেন, ভাবছেন—'কফির মধ্যে আবার তেলতেলে ঘি! এটা কি খাওয়া যায়?' সত্যি বলতে, প্রথমবার যখন স্বাস্থ্য সচেতন মহলে তুমুল জনপ্রিয় এই 'ঘি-কফি' (যা বুলেটপ্রুফ কফি নামেও পরিচিত) এর কথা শুনেছিলাম, আমার প্রতিক্রিয়াও এমনই ছিল। কিন্তু যেদিন সাহস করে এক মগ বানিয়ে ট্রাই করলাম, ভুল ভাঙলো। সাধারণ কফির বদলে সেই অদ্ভুত ক্রিমি স্বাদ আর সারাদিন জুড়ে যে অফুরন্ত এনার্জি বা সতেজতা অনুভব করেছিলাম, তা এক কথায় অতুলনীয়। শুধু কি স্বাদ? দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখা থেকে শুরু করে ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি—কফির সাথে ঘি মেশানোর এই ছোট্ট অভ্যাসটি আপনার দৈনন্দিন স্বাস্থ্যের জন্য সত্যিকারের গেম চেঞ্জার হতে পারে। চলুন, আজকের ব্লগে জেনে নিই এই অদ্ভুত অথচ জাদুকরী পানীয়টির আদ্যোপান্ত এবং কেন এটি আপনার ডায়েটে রাখা উচিত।

কেন মানুষ ঘি কফির দিকে দৌড়াচ্ছে?

শুনতে একটু অদ্ভুত লাগলেও, অনেকেই বলেছেন এটি তাদের সকালের এনার্জি লেভেল বাড়াতে, মন সতেজ রাখতে এবং দীর্ঘক্ষণ ক্ষুধা লাগতে না দেওয়ায় সাহায্য করছে। যেমন ধরুন, রিমা নামের এক চাকরিজীবী আমাকে বলেছেন, “আমি সকাল সকাল অফিসে যাওয়ার আগে কফির সাথে এক চামচ ঘি মিশিয়ে খাই। আশ্চর্যজনকভাবে দুপুর পর্যন্ত আমার শক্তি বজায় থাকে, আর দারুণ ফোকাস করতে পারি।” শুধু এটি নয়, ঘি কফিতে মিশালে কফির গুণাগুণও ধরে থাকে এবং এটি অনেকের জন্য হজমের ক্ষেত্রেও সহায়ক। আজকের এই ব্লগে আমরা বিস্তারিতভাবে জানব কফি-ঘি কম্বিনেশন কীভাবে কাজ করে, এর স্বাস্থ্যগত উপকারিতা কী, এবং কীভাবে এটি সহজে আপনার ডায়েটে যুক্ত করা যায়।

ঘি কফি কি সত্যিই ফ্যাট বার্ন করে?

ঘি কফি একসাথে মিশিয়ে পান করলে সরাসরি বা নিজে নিজে ফ্যাট বার্ন হয়—এমন কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। তবে নির্দিষ্ট কিছু পরিস্থিতিতে এটি শরীরকে ফ্যাট ব্যবহার করার পরিবেশ তৈরি করতে পারে। কফির ক্যাফেইন সাময়িকভাবে মেটাবলিজম বাড়ায় এবং ঘির ফ্যাট ইনসুলিন বাড়ায় না, ফলে যারা ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং বা লো-কার্ব ডায়েট অনুসরণ করেন, তাদের ক্ষেত্রে শরীর ফ্যাটকে এনার্জি হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু সাধারণ খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে অতিরিক্ত ঘি কফি যোগ করলে মোট ক্যালোরি বেড়ে যায়, যা উল্টো ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। তাই বলা যায়, ঘি কফি নিজে কোনো ম্যাজিক ফ্যাট-বার্নার নয়; ফ্যাট কমাতে হলে ক্যালোরি নিয়ন্ত্রণ, সুষম খাদ্য ও নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রমই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

সকালে খালি পেটে ঘি কফি খাওয়া যাবে কি না জানুন

সকালে খালি পেটে ঘি কফি (Bulletproof Coffee) খাওয়া যাবে কি না—এটা “সম্পূর্ণ নিরাপদ” বা “একটা বড় ভুল”—এমন সরল হ্যাঁ/না উত্তর দিয়ে বিজ্ঞান সমন্বিত বলা একটু জটিল, কারণ এখানে সঠিকতা নির্ভর করে তোমার শরীর, উদ্দেশ্য, এবং স্বাস্থ্য অবস্থার ওপর। নিচে রিসার্চ-ভিত্তিক (প্রমাণভিত্তিক) তথ্যগুলো দেওয়া হলো👇 

১) সাধারণ কফি খালি পেটে কেমন থাকে? অনুসন্ধানে দেখা গেছে, খালি পেটে সাধারণ ব্ল্যাক কফি বেশিরভাগ মানুষের জন্য সাধারণত ক্ষতিকর নয়, তবে কিছু ব্যক্তিতে এটি অ্যাসিডিটি, বুকজ্বালা, বা ডাইজেস্টিভ ডিসকমফোর্ট তৈরি করতে পারে কারণ কফি পেটে অ্যাসিডিটি বাড়াতে পারে। প্রতিক্রিয়া ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে।

☕️২) ঘি কফি বা Bulletproof Coffee সম্পর্কে গবেষণা Bulletproof Coffee হলো কফি + ঘি/বাটার + (প্রায়ই MCT oil) মিলিয়ে বানানো। কিছু পুষ্টিবিদ বলেন এটি: এনার্জি বাড়াতে পারে এবং দীর্ঘ সময় পেটে ভরাট অনুভব করাতে পারে (এটা বিশেষ করে keto বা low-carb ডায়েটে সহায়ক)।

ক্যালোরি ও স্যাচুরেটেড ফ্যাট অনেক বেশি থাকে, তাই ঘন ঘন ও প্রচুর খেলে মোট ক্যালোরি বাড়তে পারে। Cleveland Clinic +1 সিম্পলি বললে—এটি সাধারণ ব্ল্যাক কফির চেয়েও বহু বেশি ক্যালোরি ও ফ্যাটেড, তাই প্রতিদিন সকালে খালি পেটে নিয়মিত বড় পরিমাণে খাওয়া বেশি পুষ্টি বা স্বাস্থ্য উপকার দেয়—এমন দৃঢ় বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। 

🍽️৩) খালি পেটে কি ঠিক? এটা মানুষের উদ্দেশ্যের ওপর নির্ভর করে: যদি তোমার লক্ষ্য হয় ডায়েট কন্ট্রল চালিয়ে যাওয়া, গ্রাসেল ফ্যাট দিয়ে লম্বা সময় পেট ভরা থাকা, তবে কিছু ডায়েট বিশেষজ্ঞের মতে এটি সহজে এনার্জি দেয় ও ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।কিন্তু পেট খালি থাকলে অনেকের কাছে কফির অ্যাসিডিটি বা ডাইজেস্টিভ সমস্যা হতে পারে—এটা সাধারণ কফির ক্ষেত্রেও বলা হয়েছে।

উচ্চ স্যাচুরেটেড ফ্যাটের কারণে নিয়মিত খাবার পরিবর্তে ঘি কফি নেওয়া সম্পূর্ণ উপযুক্ত বালেন্সড ব্রেকফাস্ট নয়। স্বাভাবিক ডায়েট/স্বাস্থ্য অবস্থায় সকালে পেট খালি থাকার সময় অতিরিক্ত ফ্যাট-ক্যালোরি খাওয়া প্রত্যেকের জন্য যুক্তিসঙ্গত নয়।

সংক্ষেপে: সাধারণভাবে ঘি কফি খালি পেটে খাওয়া “একেবারেই নিষেধ”—এমন কোনো শক্ত বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই, কিন্তু সব মানুষের জন্য উপকারী—এমনও প্রমাণ নেই। এটা আপনার শরীরের রেসপন্স, কফি-অ্যাসিডিটিতে সহ্যক্ষমতা, ও ডায়েট লক্ষ্য অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিন। কিছু মানুষের কাছে এটি সহ্য হবে আর কিছু মানুষের জন্য এতে অ্যাসিডিটি বা অন্যান্য অস্বস্তি হতে পারে

ঘি কফির ১০টি বৈজ্ঞানিক ভিত্তিক উপকারিতা

কফির সঙ্গে ঘি মিশিয়ে খাওয়ার একটি উল্লেখযোগ্য উপকারিতা হলো শক্তি বৃদ্ধি ও মনোযোগ উন্নতি। বুলেটপ্রুফ কফিতে থাকা ক্যাফেইন মস্তিষ্ককে উদ্দীপিত করে, ফলে সতর্কতা ও ফোকাস বাড়তে পারে। একই সঙ্গে ঘিতে থাকা মিডিয়াম চেইন ট্রাইগ্লিসারাইড (এমসিটি) সহজে ও দ্রুত হজম হয়ে শরীরে দ্রুত শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। এই এমসিটি লিভারে গিয়ে সরাসরি এনার্জি হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে, যা দীর্ঘ সময় ধরে ক্লান্তি কমিয়ে কাজের ক্ষমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। ফলে অনেকের ক্ষেত্রে এটি মানসিক একাগ্রতা ও কর্মক্ষমতা উন্নত করতে সহায়ক হতে পারে।

কফির সঙ্গে ঘি মিশিয়ে খাওয়ার আরেকটি সম্ভাব্য উপকারিতা হলো ক্ষুধা কমানো ও ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা। এতে থাকা উচ্চমাত্রার চর্বি পাকস্থলীতে তুলনামূলকভাবে ধীরে হজম হয়, যার ফলে দীর্ঘ সময় পেট ভরা অনুভূতি বজায় থাকে। এই তৃপ্তির অনুভূতি ঘন ঘন ক্ষুধা লাগা ও অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমাতে সাহায্য করতে পারে। বিশেষ করে ঘিতে থাকা স্যাচুরেটেড ফ্যাট হজম হতে সময় নেওয়ায় ক্ষুধা দমনকারী হরমোনের কার্যকারিতা বাড়তে পারে। তবে এটি তখনই ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হয়, যখন মোট ক্যালোরি গ্রহণ নিয়ন্ত্রিত থাকে এবং সুষম খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করা হয়।

কফির সঙ্গে ঘি মিশিয়ে খাওয়া কেটোজেনিক ডায়েট অনুসরণকারীদের জন্য সহায়ক হতে পারে। ঘি উচ্চ-ফ্যাট ও প্রায় শূন্য কার্বোহাইড্রেটযুক্ত হওয়ায় এটি কেটো ডায়েটের মূল নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ঘিতে থাকা ফ্যাট শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়ায় না এবং লিভারে গিয়ে কিটোন উৎপাদনে সহায়তা করে, ফলে শরীর শক্তির উৎস হিসেবে গ্লুকোজের পরিবর্তে ফ্যাট ব্যবহার করতে শুরু করে। এর মাধ্যমে ফ্যাট বার্নিং প্রক্রিয়া সক্রিয় ও তুলনামূলকভাবে ত্বরান্বিত হতে পারে। তবে কেটোজেনিক ডায়েটে থেকেও মোট ক্যালোরি ও পুষ্টির ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি।

কফির সঙ্গে ঘি মিশিয়ে খাওয়ার আরেকটি উপকারিতা হলো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সুবিধা। কফিতে প্রাকৃতিকভাবে থাকা বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের কোষকে ফ্রি র‌্যাডিক্যালের ক্ষতিকর প্রভাব ও অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে সুরক্ষা দিতে সাহায্য করে। এই অক্সিডেটিভ স্ট্রেস দীর্ঘমেয়াদে বিভিন্ন প্রদাহজনিত সমস্যা ও কোষের ক্ষতির সঙ্গে সম্পর্কিত। নিয়মিত ও পরিমিত মাত্রায় কফি গ্রহণ করলে এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদানগুলো শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী রাখতে সহায়ক হতে পারে।

কফির সঙ্গে ঘি মিশিয়ে খাওয়ার আরেকটি সম্ভাব্য উপকারিতা হলো রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করা। ঘি কফি প্রায় সম্পূর্ণভাবে ফ্যাটভিত্তিক এবং এতে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ খুবই কম থাকে, ফলে এটি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি কমাতে পারে। পাশাপাশি ফ্যাট ধীরে হজম হওয়ায় শক্তি ধীরে ধীরে মুক্ত হয়, যা রক্তে শর্করার ওঠানামা কমাতে সাহায্য করে। এ কারণে লো-কার্ব বা কেটোজেনিক ডায়েট অনুসরণকারীদের ক্ষেত্রে এটি তুলনামূলকভাবে রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে, তবে ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে নিয়মিত গ্রহণের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

কফির সঙ্গে ঘি মিশিয়ে খাওয়ার একটি সম্ভাব্য ঝুঁকি হলো কোলেস্টেরল বৃদ্ধি। ঘিতে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে বেশি, যা অতিরিক্ত ও দীর্ঘদিন গ্রহণ করলে রক্তে এলডিএল (খারাপ) কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে পারে। এলডিএল কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে হৃদ্‌রোগ ও অন্যান্য কার্ডিওভাসকুলার সমস্যার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে নিয়মিত ও অতিরিক্ত পরিমাণে বুলেটপ্রুফ কফি পান করলে মোট ক্যালোরি ও স্যাচুরেটেড ফ্যাট গ্রহণ বেড়ে যায়, যা রক্তের লিপিড প্রোফাইলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই হৃদ্‌স্বাস্থ্য বিবেচনায় রেখে সীমিত পরিমাণে ও সচেতনভাবে এটি গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ।

কফির সঙ্গে ঘি মিশিয়ে খাওয়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অসুবিধা হলো ওজন বৃদ্ধি। ঘি অত্যন্ত ক্যালোরি-সমৃদ্ধ হওয়ায় ঘি কফি নিয়মিত ও পরিমিতভাবে না খেলে দৈনিক ক্যালোরি গ্রহণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যেতে পারে। ক্যালোরি ব্যালান্স নষ্ট হলে শরীর অতিরিক্ত শক্তিকে চর্বি হিসেবে জমা করে, যার ফলে ধীরে ধীরে ওজন বাড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। বিশেষ করে স্বাভাবিক খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি অতিরিক্তভাবে ঘি কফি গ্রহণ করলে এটি স্থূলতার সম্ভাবনা বাড়াতে পারে। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে ঘি কফি অবশ্যই সীমিত পরিমাণে এবং সামগ্রিক ডায়েট পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গ্রহণ করা উচিত।
যারা ওজন কমাতে চান তাদের জন্য বিশেষ নোট
ওজন কমানোর উদ্দেশ্যে ঘি কফি খাওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ নয়, কিন্তু এটি কেবল তখনই সহায়ক হতে পারে যখন কিছু বিষয় মাথায় রাখা হয়।
  1. পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ: ঘি অত্যন্ত ক্যালোরি-সমৃদ্ধ, তাই একবারে ১–২ চা চামচের বেশি না খাওয়া উত্তম। বেশি খেলে মোট ক্যালোরি বেড়ে ওজন কমানো কঠিন হয়ে যায়।

  2. নাস্তার বদলে বা ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং: যদি সকালে খালি পেটে ঘি কফি পান করা হয় এবং সাধারণ ব্রেকফাস্ট বাদ দেয়া হয়, তাহলে এটি দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখে এবং অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমায়। এতে শরীর ফ্যাট ব্যবহার করতে পারে।

  3. সুষম ডায়েট ও ব্যায়াম: শুধুমাত্র ঘি কফি পানের উপর নির্ভর না করে, মোট ক্যালোরি নিয়ন্ত্রণ, প্রোটিন ও সবজি সমৃদ্ধ ডায়েট এবং নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম রাখতে হবে।

সারসংক্ষেপে, যারা ওজন কমাতে চান, তারা ঘি কফি খেতে পারে, কিন্তু এটি মাপসই পরিমাণে এবং সঠিক ডায়েটের সঙ্গে মিলিয়ে ব্যবহার করতে হবে। অতিরিক্ত বা অযথা খেলে ওজন কমানোর পরিবর্তে ওজন বৃদ্ধি হতেই পারে।

ভুলভাবে খেলেই সর্বনাশ! কোন ৫টি ভুল এড়িয়ে চলবেন

ঘি কফি খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সাধারণ ভুল এড়িয়ে চললে এটি স্বাস্থ্য ও ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে। এখানে প্রধান কিছু ভুল তুলে ধরা হলো:
  1. অতিরিক্ত ঘি ব্যবহার করা – একসাথে বেশি ঘি খেলে ক্যালোরি বাড়ে এবং ওজন বাড়ার সম্ভাবনা থাকে।

  2. দৈনন্দিন খাবারের সঙ্গে অতিরিক্ত ক্যালোরি যোগ করা – ঘি কফির পর অতিরিক্ত নাস্তা বা মিষ্টি খেলে ওজন কমানোর সুবিধা শেষ হয়ে যেতে পারে।

  3. খালি পেটে অতিরিক্ত কফি/ঘি খাওয়া – অনেকের জন্য এটি অ্যাসিডিটি বা পাকস্থলীর সমস্যা তৈরি করতে পারে।

  4. বারবার এবং নিয়মিত অতিরিক্ত খাওয়া – নিয়মিত বড় পরিমাণে ঘি কফি খেলে কোলেস্টেরল ও স্যাচুরেটেড ফ্যাট বেড়ে হার্টের ঝুঁকি বাড়তে পারে।

  5. স্বাস্থ্যগত পরিস্থিতি উপেক্ষা করা – ডায়াবেটিস, উচ্চ কোলেস্টেরল বা কার্ডিওভাসকুলার সমস্যা থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ঘি কফি খাওয়া উচিত নয়।

সারসংক্ষেপে, পরিমিত পরিমাণ, সময়মতো এবং স্বাস্থ্য পরিস্থিতি অনুযায়ী ঘি কফি খাওয়া নিরাপদ ও উপকারী।

ঘি কফির সেরা রেসিপি

ঘি কফির সবচেয়ে কার্যকর এবং জনপ্রিয় রেসিপি হলো “বুলেটপ্রুফ কফি”, যা তৈরি করা সহজ এবং শরীরের জন্য তুলনামূলকভাবে উপকারী। তৈরির জন্য প্রথমে একটি কাপ (প্রায় 240 মিলি) ব্ল্যাক কফি গরম করতে হবে। গরম কফিতে ১–২ চা চামচ খাঁটি ঘি এবং চাইলে ১ চা চামচ MCT তেল যোগ করা যায়। এরপর ব্লেন্ডার বা হ্যান্ড ব্লেন্ডার ব্যবহার করে ২০–৩০ সেকেন্ড পর্যন্ত ভালোভাবে ফেনা ওঠা পর্যন্ত মিশাতে হবে। ফেনাযুক্ত কফি খেলে তা শুধু স্বাদেই সমৃদ্ধ হয় না, বরং দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখে এবং শরীরকে ধীরে ধীরে এনার্জি সরবরাহ করে।

বুলেটপ্রুফ কফির সুবিধাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো শক্তি ও মনোযোগ বৃদ্ধি। কফির ক্যাফেইন মস্তিষ্ককে উদ্দীপিত করে এবং মনোযোগ ও ফোকাস উন্নত করে, যখন ঘি এবং MCT তেল দ্রুত হজম হয়ে শরীরে শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। এই কারণে সকালে খালি পেটে বা ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিংয়ের সময় এটি পান করলে দীর্ঘ সময় ক্লান্তি অনুভব কম হয় এবং অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমে। এছাড়া, ঘি ধীরে হজম হওয়ায় রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বেড়ে না গিয়ে স্থিতিশীল থাকে, যা রক্তে সুগারের নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক।

তবে কিছু বিষয় মাথায় রাখা জরুরি। ওজন কমানোর জন্য মিষ্টি বা অতিরিক্ত ঘি এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ অতিরিক্ত ক্যালোরি ও স্যাচুরেটেড ফ্যাট ওজন বৃদ্ধির ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এছাড়া যারা অ্যাসিডিটি, উচ্চ কোলেস্টেরল বা কার্ডিওভাসকুলার সমস্যা রয়েছে, তাদের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সঠিক পরিমাণে এবং স্বাস্থ্যসম্মত ডায়েটের সঙ্গে মিলিয়ে খেলে এই রেসিপি শক্তি, মনোযোগ, ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ এবং দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখার ক্ষেত্রে কার্যকর হতে পারে।

আপনার জন্য ঘি কফি উপযুক্ত কি না?

ঘি কফি কিছু মানুষের জন্য স্বাস্থ্য ও এনার্জি বৃদ্ধিতে সহায়ক হলেও সকলের জন্য উপযুক্ত নয়। এটি বিশেষভাবে উপকারী হতে পারে যারা ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং বা কেটোজেনিক/লো-কার্ব ডায়েট অনুসরণ করেন, কারণ এতে থাকা উচ্চ ফ্যাট এবং কম কার্বোহাইড্রেট শরীরকে শক্তির জন্য জমে থাকা ফ্যাট ব্যবহার করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি যারা দীর্ঘ সময় ধরে এনার্জি বজায় রাখতে চান বা সকালের ক্ষুধা দমিয়ে ফোকাস ও মনোযোগ বাড়াতে চান, তাদের জন্য এটি কার্যকর হতে পারে।

তবে ঘি কফি সকলের জন্য উপযুক্ত নয়। যাদের হৃদরোগ, উচ্চ কোলেস্টেরল, লিভার সমস্যা বা ডায়াবেটিস আছে, তাদের ক্ষেত্রে ঘি কফি অতিরিক্ত স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং ক্যালোরি বৃদ্ধির কারণে ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া যারা অ্যাসিডিটি, গ্যাস্ট্রিক বা পাকস্থলীর সমস্যা নিয়ে ভুগছেন, তাদের খালি পেটে ঘি কফি খাওয়া হজমজনিত সমস্যা বা অস্বস্তি তৈরি করতে পারে। সংক্ষেপে, ঘি কফি সীমিত পরিমাণে এবং স্বাস্থ্যগত অবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গ্রহণ করা উচিত, আর যাদের চিকিৎসা সংক্রান্ত সমস্যা আছে, তারা অবশ্যই আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

কফির সঙ্গে ঘি মিশিয়ে খাওয়া কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে উপকারী হতে পারে, বিশেষ করে যারা কেটোজেনিক বা লো-কার্ব ডায়েট অনুসরণ করছেন। এতে থাকা উচ্চ ফ্যাট শরীরকে শক্তির জন্য ফ্যাট ব্যবহার করতে সাহায্য করে এবং দীর্ঘ সময় এনার্জি বজায় রাখে। তবে অতিরিক্ত স্যাচুরেটেড ফ্যাট গ্রহণের ফলে কোলেস্টেরল বৃদ্ধি, ওজন বৃদ্ধি এবং হৃদরোগসহ অন্যান্য কার্ডিওভাসকুলার ঝুঁকি বাড়তে পারে। এজন্য ঘি কফি পরিমিত পরিমাণে এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরিস্থিতি অনুযায়ী গ্রহণ করা উচিত। যারা হৃদরোগ বা উচ্চ কোলেস্টেরলের ঝুঁকিতে আছেন, তাদের ক্ষেত্রে ঘি কফি ব্যবহারের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন